বাংলাদেশে
এখন প্রাইভেট ক্লিনিকের অভাব নেই। যেদিকেই থাকান দেখবেন অনেক বিলাস বহুল দালানে বিলাস
বহুল সব ক্লিনিকের সাইনবোর্ড। ডাক্তার মূল কাজ রোগীর সেবা করা। কিন্তু এখনকার
পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন ডাক্তাররা যারা বিভিন্ন সরকারী মেডিক্যাল এ আছেন
তারাও মেডিক্যাল এ সঠিক সময় দেয় কিনা তা আমার বোধগম্য নয়। কোন রকম ইন্টার্নিশিপ
পার করতে পারলেই হল। কোন না কোন প্রাইভেট ক্লিনিকের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে তারা। আর
তখন থেকেই শুরু হয় তাদের গলা কাটার প্র্যাকটিস। সরকারী মেডিক্যাল কোন রোগী ভর্তি করালে
সেখানে ডাক্তারদের ধান্ধা একটু কম হয় সেটা সবার ধারণা। কিন্তু সেখানেও তারা ধান্ধা
করে। বিভিন্ন প্রকার টেস্ট দিয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম উল্লেখ করে দেয়
প্রেসক্রিপশনে। দেখা যায় যে এরকম ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সাথেও রয়েছে মেডিক্যাল
অফিসারদের সম্পৃক্ততা। তারা ওখান থেকে কমিশন পায়। আবার প্রাইভেট ক্লিনিকে যখন কোন
রোগী ভর্তি করা হয়। ভর্তির সময় তারা এমন আতিথেয়তা দেখায় যে, মন ভরে যায়। কিন্তু
ভর্তি হওয়ার পরই বোঝা যায় আসলে তারা কি! গত কাল রাত্রে আমি আমার এক বাড়ীওয়ালা ছোট
বোনকে নিয়ে চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে যায়। ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করানোর
সাথে সাথে ডিউটি ডাক্তার আমার ছোট বোনকে চেক আপ করেন। পরে কল দিয়ে একজন গাইনী
বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসা হয়। আসলে আমার ছোট বোনটির বয়স মাত্র ১৪ বৎসর। তার পেটে ব্যাথার
কারণে তাকেএ ক্লিনিকে ভর্তি করানো। তার প্রয়োজন ছিল একজন মেডিসিন ডাক্তারের। আমরা
অনেক করে বলার পরও ডিউটি ডাক্তার বললেন ম্যাডাম আসুক উনি দেখে যদি না হয় তাহলে
উনিই বলবেন কোন বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে। আমরা প্রায় পৌনে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর সেই
গাইনী বিশেষজ্ঞ আসেন এবং চেকআপ করে প্রেসক্রিপশনে এমনভাবে লিখেন যে একটি A-4
সাইজের কাগজ পূর্ণ করে ফেললেন মেডিসিন আর টেস্ট দিয়ে। তাকে স্যালাইন দেওয়া হল,
ইনজেকশন পুশ করা হলো। ডাক্তার বললেন কিছুক্ষণ দেখেন যদি ভাল না লাগে তাহলে আরো
পাওয়ারফুল ঔষধ দিতে হবে। ডাক্তার চলে গেলেন। তিনি যাওয়ার ১ ঘন্টা পরও কোন উন্নতি
না দেখে ডাক্তারকে আবার যখন কল দেওয়া হয়, তখন তিনি ডিউটি ডাক্তারকে বলেন আমার ছোট
বোনের ইসিজি করার জন্য। ইসিজি করা হয়। ইসিজি রিপোর্টে কি আসছে আমরা তো আর জানি না।
কিন্তু ডিউটি ডাক্তার আমাদের বলেন উনার হার্ট এর প্রবলেম হয়েছে। ম্যাডাম বলেছেন
উনাকে মেডিক্যাল এ নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা যখন তাকে রিলিজ নিয়ে নিলাম তখন দেখি
২ঘন্টা ২০ মিনিটে তারা বিল করেছে ৫,২০০/- টাকা। অথচ, যে রুমটাতে আমরা ছিলাম সে রুম
দিয়ে অনেক গন্ধ বের হচ্ছিল। পরে আমরা রাতের ১.৩০ টায় আমার ছোট বোনকে নিয়ে
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায়। তখন মেডিক্যাল এর সে ওয়ার্ডে আমার ছোট
বোনকে ভর্তি করা হয় সে ওয়ার্ডে তিল পরিমাণ জায়গা নেই কোথাও। তারপরও আমরা কষ্ট করে
ডিউটি ডাক্তারকে ডেকে চিকিৎসা করার জন্য বলি। তিনি আবার ইসিজি করতে বলেন। ইসিজি
রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বলেন তার হার্টের কোন সমস্যা নাই। যদি তার হার্টের সমস্যা
আছে কেউ বলে থাকে তাহলে আমি ডাক্তারি ছেড়ে দিব। তখন আমরা তার কাছে একটি সিটের
ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তিনি বলেন সেটা সম্ভব হবে না। পরে ডাক্তারের
অনুমতি নিয়ে আমরা স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করায় আবারো। সেখানকার ডিউটি ডাক্তার
যিনি ছিলেন তিনি আমার ছোট বোনের অবস্থা দেখে বললেন, এর কি রোগ হয়েছে আর একে কি
চিকিৎসা দিয়ে এসেছেন? তখন আমাদের সবার চোখ কপালে উঠে যায়। এরকম হচ্ছে কেন? যেখানে
যায় একেক জায়গায় একেক রকম কথা কেন? পরে আর ঘুরাঘুরি না করে ঐ ক্লিনিকেই ভর্তি রেখে
আজ সকালে বাড়ী ফিরলাম। এবং অনেক চিন্তা ভাবনা করে বুঝতে পারলাম আসলে ডাক্তারের
তাদের ধান্ধা নিয়ে ব্যস্ত। তারা রোগীর সেবা নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। প্রত্যেক
ক্লিনিকে প্রফেসর এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছেন। কিন্তু আপনার মুখ থেকে যতক্ষণ বের
হবেনা বিশেষজ্ঞের কথা তথক্ষণ সেই সাধারণ ডাক্তার দিয়েই চলে চিকিৎসা। এই হচ্ছে
বর্তমান বাংলাদেশের চিকিৎসা খাত আর ডাক্তারদের রোগী সেবা...